পৃথিবীতে প্রত্যেক দেশেই চিকিৎসা সেবার প্রয়োজনীয়তা কে যথাজত মূল্যায়ন করা হয়, ঠিক সেইভাবেই বাংলাদেশেয় চিকিৎসা সেবা প্রত্যেক এর জন্য অতিপ্রয়োজনিও। এই সেবার সাথে যারা সংযুক্ত যথা চিকিৎসক, অনুবিজ্ঞানি, জীব বিজ্ঞানি, চিকিৎসা কর্মী, প্রত্যেকেই শিক্ষিত, কারন এই পেশাতে যারা নিয়োজিত তাদের উক্ত বিষয় গ্যান অর্জন না করলে সেবা প্রদান করা সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা আশা করব চিকিৎসা সেবার সাথে যারা জড়িত আছেন তারা প্রত্যেকে সমাজের সচেতন নাগরিক এবং পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে তারা যথেষ্ট সচেতন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় বাস্তব চিত্র অন্যরকম, আমরা একটু খেয়াল করলেই দেখি দেশের বড় বড় শহর গুলতে যেখানে সেখানে হাসপাতাল, রোগ নির্ণয় কেন্দ্র, ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। এমন কি শুধু আবাসিক এলাকা তেই নয়, আবাসিক ভবনের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে অন্য পাঁচটি সাধারণ ব্যবসার মতন সেখানে চিকিৎসা কেন্দ্র শুরু হয়। আমরা ধরে নিচ্ছি যে এইসব কেন্দ্র গড়ে উঠেছে প্রয়োজনীয় রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করে মানুষের মূল্যবান প্রাণ বাঁচানোর জন্য। কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে এইসব রোগ নির্ণয় কেন্দ্র ও হাসপাতাল থেকে বর্জ্য, যত্র তত্র ফেলে দেওয়ার কারনে জীবন রক্ষার পরিবর্তে এইসব হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র গুলো হয়ে পরছে প্রাণ ঘাতি। বিশ্বের অন্য দেশে এই স্পর্শকাতর মেডিকেল বর্জ্য ধ্বংসের বিশেষ ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশে এ নিয়ে যেন কারই কোন মাথা ব্যাথা নেই।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের পাশে, আবাসিক এলাকার সড়ক গুলোতে, এমন কি অভিজাত এলাকার সড়কে বর্জ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে থাকে। এইসব বর্জ্যরে সাথেই মিলে মিশে থাকে মেডিকেল বর্জ্য। কাঁক, কুকুর, ইঁদুর, মশা, মাছি ও অন্যান্য প্রাণীরা এইসব বর্জ্য থেকে উচ্ছিষ্ট খাবার খায়। এইসব ক্ষেত্রে খাদ্য খোজা প্রাণীরা আবার জীবাণু নিয়ে জনবহুল এলাকায় ছড়িয় পরে এবং বিভিন্ন স্থানে বিচরণ করে। প্রয়াসই কিছু দরিদ্র শিশুদের দেখা যায় যে মেডিকেল বর্জ্যরে কিছু উদকরন যেমন সুচ, স্যালাইনের বোতল, ইত্যাদি খেলনার অনুশঙ্গ মনে করে বর্জ্য থেকে তুলেয় নিয়ে খেলা করে। এর ফলে সুস্থ মানুষ এর মধ্যে এইসব বিপদজনক উপকরন থেকে, জটিল এমন কি প্রাণ ঘাতি রোগের সঞ্চার হতে শুরু করে।
তথ্য মতে বড় বড় হাসপাতাল ছাড়াও পাড়া মহল্লা ক্লিনিক গুলোতে অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে। নানা ছওাচে রোগের রুগির মল মুত্র, রক্ত বর্জ্য হয়ে চলে আশে খোলা ময়দান বা রাস্তার ধারে। বাতাসে এবং বিভিন্ন উপরে উল্লেখিত কারনে সুস্থ মানুষের দেহে ছড়িয়ে যায় সেইসব ছওাচে রোগের জীবাণু। সম্প্রতি ডাস্টবিন থেকে খাবার খেয়ে কাঁক মরার ঘটনা ও ঘটেছে। একটু তলিয়ে দেখলেই দেখা যাবে যে সাধারন বর্জ্যরে সাথে সহ অবস্থানেই থাকে বিভিন্ন রকম জীবননাশক মেডিকেল বর্জ্য। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি যে রাজধানি ঢাকা সহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে পানির পাইপ ফেটে বা ছিদ্র হয়ে থাকে এই জন্য পানি দুরগন্ধ ও জীবাণুযুক্ত হয়ে যায়। এবং আতঙ্কের বিষয় হল ড্রেনে গিয়ে এর পর পানির ফাটা বা ছিদ্র পথ দিয়ে চলে যায় মানুষের খাবার পানির মধ্যে। দুরভাজ্ঞজনক হলেও শত্ত যে আমাদের জনসংখ্যার বৃহৎ এক অংশ এসব পানি ব্যবহার এমন কি পান পর্যন্ত করেছেন। এতা ধরেই নেওয়া যায় যে বিভিন্ন ছোট খাবার এর দোকান গুলো নিরবিগ্নেয় এসব দুশিত পানি ব্যবহার করছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে ঢাকা ওয়াসার উচ্চ পর্যায় কর্তা বেক্তিরাও এই ব্যাপারে বক্তব্য প্রদান করেছে যে বিভিন্ন কারনে ওয়াসার পাইপ ফেটে দূষিত পানি ওয়াসার সাপ্লাই এর পানির সাথে মিস্রিত হচ্ছে। আমরা সবাই জানি মেডিকেল বর্জ্যরে এমন কিছু ভয়ানক জীবাণু আছে যে যত তাপমাত্রাতেই ফুটানো হোক না কেন, তা মরে না। উদ্বেগের বিষয় এইসব দূষণ কবলিত পানি খেয়ে মরন ঘাতী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষজন যারা জানতে পাড়ছে না তাদের রোগের কারন সম্পর্কে। আমাদের চিকিৎসক এবং চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত কর্মীদের কি দায়িত্ব নয় সাধারণ মানুষকে এই বিষয় সচেতন করা?
ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকা যথা গুলশান, বনানী, ধান্মন্দি ও উত্তরা তে ধলা কাচা বাজার বসতে দেখা যায় এবং সেই বাজারের সামনে ডাস্টবিন অথবা রাস্তায় বাজারের বর্জ্য জমা হয়ে পরে থাকা দৈনন্দিন চিত্র। এইসব কাচা বাজারের মধ্যে গরু, ছাগল, মুরগি জবাই হয়ে থাকে বাজার এর সামনের রাস্তায়। এইসব খোলা বাজার গুলর সাথে বা সামনে ফলের দোকান বা খাবারের দোকান অবস্থান করছে, যেখান থেকে অবিরাম খাবার কেনা বেচা হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এইসব বর্জ্য পরিবেশ দূষণের বড় কারণ।
লেখক: প্রেসিডেন্ট,আমেরিকান চেম্বার অব বাংলাদেশ ।