কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় চলতি বছর টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারমূল্য কম হওয়ায় কৃষকেরা হতাশ। বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে আবাদ করে লাভের বিপরীতে লোকসান গুনছেন তাঁরা। এ এলাকায় টমেটো সংরক্ষণের জন্য কোনো হিমাগার না থাকায় কৃষকেরা বাধ্য হয়ে কম দামেই টমেটোগুলো বিক্রি করছেন।
উপজেলার চাঁদগাঁও গ্রামের কৃষক রহমত উল্লাহ বলেন, চলতি বছর তিনি আট বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে চার লাখ টাকা। দাম কম হওয়ায় দুই লাখ টাকার মতো বিক্রি করতে পারবেন। এতে তাঁর দুই লাখ টাকা ক্ষতি হবে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিনি টমেটোর আবাদ করেছেন। এখন ঋণ পরিশোধ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় চলতি মৌসুমে উপজেলায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানান উপজেলার নূরপুর গ্রামের কৃষক হাসান মীর। তিনি বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে ১০ হাজার থেকে ১০ হাজার ৪০০ কেজি পর্যন্ত টমেটোর ফলন হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রতি কেজি টমেটোর বাজারমূল্য তিন থেকে পাঁচ টাকা হওয়ায় কৃষকেরা লাভের বিপরীতে লোকসান গুনছেন।
প্রায় ২০ বছর ধরে ১০ বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করছেন চাঁদগাঁও গ্রামের কৃষক ইদ্রিস মিয়া। চলতি বছর টমেটো আবাদে তাঁর পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত টমেটো বিক্রি করতে পারবেন তিনি। দাম না থাকায় লাভের বিপরীতে অর্ধেকের বেশি টাকা লোকসান দিতে হবে বলে জানান ইদ্রিস। তাঁর ভাষ্য, গত বছর করোনার সময়ে লাভ না হলেও লোকসান হয়নি। অথচ চলতি বছর বাম্পার ফলন হওয়ার পরও লোকসান দিতে হচ্ছে।
উপজেলার দৈয়াবাড়ি গ্রামের কৃষক অজয় চন্দ্র সরকার ও টামটা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, তাঁরা ১০ বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করেছেন। ফলনও বাম্পার হয়েছে। বাজারমূল্য কম হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার চাঁদগাঁও গ্রামের গৃহবধূ ইরন বেগম বলেন, এ এলাকার টমেটো খেতে খুবই সুস্বাদু। টমেটোর ব্যাপক চাহিদাও আছে। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলার চাহিদাও মিটাচ্ছে। রপ্তানির ব্যবস্থা হলে কৃষকেরা অনেক বেশি লাভবান হবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর দাউদকান্দিতে ২১৮ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। চলতি বছর ২৩০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। উপজেলায় হাইব্রিড বাহুবলী, মহারাজা, সুফল এশী, আলক, বি এল ৬৪২ ও চিরঞ্জীব উন্নত জাতের টমেটো চাষ হওয়ায় এবং কৃষি বিভাগের নিয়মিত তদারকিতে পোকার আক্রমণ না হওয়ায় চলতি বছর বাম্পার ফলন হয়েছে।
আড়তে প্রচুর পরিমাণে টমেটোর সরবরাহ থাকায় কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ী সুমন মিয়া। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার জামান বলেন, এক যোগে সব টমেটো সংগ্রহের কারণে ভোক্তার চাহিদা কমে গেছে। এ জন্য বাজারে টমেটোর দাম কমে গেছে। গড়ে প্রতি কেজির দাম পাঁচ টাকা হলেও কৃষকদের লোকসান হবে না।