হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার, অর্থ আত্মসাত এবং নানা অনিয়ম-দুর্নীতে অভিযুক্ত থাকার পাশাপাশি দীর্ঘ দিন ধরে প্রকাশনা আইন লংঘনের দায়ে বিতর্কিত ব্যবসায়ী খালেক-নজরুলের মালিকানাধীন প্রাইম মাল্টিমিডিয়া লিঃ এর ইংরেজী জাতীয় দৈনিক ‘দি নিউজ টুডে’ পত্রিকার ঘোষণাপত্র বাতিল করে দিয়েছে সরকার। গত ২১ জানুয়ারী ঢাকার জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম পত্রিকাটি বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করেন। জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রকাশনা আইন লংঘনের দায়ে এম এ খালেকের ঘোষণাপত্র বাতিলের জন্য তথ্য-প্রমাণসহ তদানীন্তন জেলা প্রশাসককে চিঠি দেন লে. কর্ণেল (অবঃ) শাফায়াত করিম সাজ্জাদ। অন্যদিকে ‘নিউজ টুডে’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক-প্রকাশক ও একুশে পদক প্রাপ্ত সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ গত বছরের ৫ জানুয়ারী প্রাইম মাল্টিমিডিয়িা লিঃ এর সাবেক চেয়ারম্যান খালেকের বিরুদ্ধে চুক্তি লংঘনের দায়ে ঘোষণাপত্র বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসককে চিঠি দেন। কিন্তু তদানীন্তন জেলা প্রশাসক বিষয়টিকে একদমই আমলে নেননি। তবে বর্তমান জেলা প্রশাসক যোগদান করার পর পরই অভিযোগ গুলোর বিষয়ে শুনানীর আয়োজন করেন। গত বছরের ২৫ এবং ৩১ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। শুনানীর প্রায় ৬ মাস পর পত্রিকাটির ঘোষণাপত্র বাতিল করা হল। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সালে প্রাইম মাল্টিমিডিয়িা লিঃ প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো রিটার্ন জমা বা সরকারকে এক পয়সাও কর দেয়নি। ৬ বছরে একবারও ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। ‘নিউজ টুডে’র কাছে সরকারের প্রায় ১ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে বলে জানা গেছে। এদিকে নাম সর্বস্ব প্রাইম মাল্টিমিডিয়িা লিঃ কোম্পানী খুলে পত্রিকা পরিচালনার নামে ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে এনবিআর’র অডিট ইন্টেলিজেন্স ও ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। ২০০২ সালে ‘নিউজ টুডে’র যাত্রার শুরু থেকে পত্রিকাটি ভালভাবে চললেও বিতর্কিত ব্যবসায়ী খালেক-নজরুলের মালিকানাধীন প্রাইম মাল্টিমিডিয়া লিঃ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই চরম দুর্দিন নেমে আসে পত্রিকাটির সাংবাদিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর। অস্তিত্বহীন-নাম সর্বস্ব প্রাইম মাল্টিমিডিয়িা লিঃ এর সাবেক চেয়ারম্যান খালেক এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স ও প্রাইম মাল্টিমিডিয়িার বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুলের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির খবর দেশের শীর্ষ স্থানীয় টেলিভিশন ও পত্রিকায় প্রায়ই প্রকাশিত হচ্ছে। জামায়াত ইসলামকে অর্থায়ন ও বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স,প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স,প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি এবং প্রাইম ব্যাংকসহ খালেককে ১৬টি প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। বিদেশ যাত্রায় নিষেধাঙ্গা দিয়েছে দুদক। খালেকের দীর্ঘ সময়ের ব্যবসায়িক পার্টনার ও প্রধান সহযোগী নজরুলের বিরুদ্ধেও হাজার হাজার কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করছে একাধিক সংস্থা। খালেক যেসব প্রতিষ্ঠানের ত্রাণকর্তা ছিলেন এর সব ক’টির নিয়ন্ত্রণই এখন নজরুলের হাতে। সূত্রমতে খালেকের মত নজরুলকেও সরকার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাঙ্গা দিতে পারে যে কোনো সময়। অন্যদিকে খালেকের আরেক সহযোগী গেটকো গ্রুপের চেয়ারম্যান,ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স’র সাবেক পরিচালক ও প্রাইম মাল্টিমিডিয়িার পরিচালক কে.এম খালেদ ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স’র প্রায় ২২ কোটি টাকা আত্মসাত করলেও সাধারণ জনগণের গচ্ছিত এই টাকা উদ্ধারে বর্তমান পর্ষদের কোনো তৎপরতা নেই। এসব বিষয়ে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স ও প্রাইম মাল্টিমিডিয়িার বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুলের বক্তব্য জানার জন্য তার মুঠো ফোনে কয়েকবার ফোন করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, খালেক একসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এক ডেপুটি গভর্নরের বাসায় লজিং মাস্টার ছিলেন আর নজরুল জাপানের একটি হাসপাতালের কর্মচারী ছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। আর ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পর তারা রাতারাতি বনে যান হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক।