একা থাকার দিনগুলো পছন্দের বই পড়ে কাটাতে পারেন।
একা থাকার দিনগুলো পছন্দের বই পড়ে কাটাতে পারেন। প্রতীকী ছবি
‘একা বাঁচতে শেখো প্রিয়…’ করোনাভাইরাসের সংক্রমণে গায়ক আসির আরমানের আকুতিই যেন সবার কণ্ঠে। একা থাকার ব্যাখ্যা হঠাৎ পাল্টে গেছে ২০২০ সালে এসে। আইসোলেশন বা সঙ্গনিরোধের কথা শুনলেই যেন একটা ভয় ঘিরে ধরে। পরিবার নিয়ে হুল্লোড় করে দিন কাটানো মানুষগুলোর জন্য সেটা যেন আরও কঠিন। একই বাড়িতে থেকেও নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা কঠিন। তবে চেষ্টা তো করতেই হবে।
প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে অন্যদের সুরক্ষার কথা ভাবলে সেটা মেনে নিয়ে নিজেকে আটকে ফেলতে হবে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে। স্কয়ার হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডের পরামর্শক ও মেডিসিন বিভাগের সহযোগী পরামর্শক ডা. দীপঙ্কর কুমার বসাক বললেন, ‘আইসোলেশন তো নানা কারণে হতে পারে। তবে করোনাভাইরাসের জন্য যে আইসোলেশন, সেখানেও দুটি ধরন আছে। কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে যান, কেউ আবার আশঙ্কা থেকে। একা থাকা কঠিন হলেও এ দুই ধরনের লোককেই ঠিকমতো আইসোলেশনে থাকতে হবে। কারণ, তার কারণে যাতে ঘরের আরেকটি মানুষ আক্রান্ত না হন, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি।’
সঙ্গনিরোধের সময়টা অনেককেই বাসায় থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। অনেকের করোনা পজিটিভ হওয়ার পরও শরীরে বিশেষ কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এ ধরনের রোগীকে হাসপাতালে না আসতে হলেও নিজের ঘরে পরিবারের বাকি সদস্যদের থেকে দূরে থাকতে হবে। আবার যিনি করোনা আক্রান্ত নন, কিন্তু করোনা পজিটিভ কারও সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁকেও মেনে চলতে হবে সঙ্গনিরোধ। এ সময়ে বাসায় বসে সময় পার করা অনেক কঠিন। কর্মব্যস্ত মানুষের জন্য তো সঙ্গনিরোধ রীতিমতো ভয়ংকর। তবে এই সময়টুকুও কাজে লাগাতে পারেন। একান্ত নিজের জন্য রাখতে পারেন সময়টা।
করোনা রোগীর সঙ্গনিরোধ
যখন আপনি করোনা পজিটিভ, সেই মুহূর্ত থেকে নিজেকে আটকে ফেলুন ঘরে। অনেকের শুরুতে অল্প জ্বর-কাশি থাকলেও বেশ ফিট থাকেন। তবে নিজের ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। নিজের কাজের তিন সপ্তাহের একটি তালিকা তৈরি করে নিন। এই সময়ে পছন্দের বইগুলো পড়ে শেষ করুন। জরুরি কাগজপত্র, গবেষণাপত্র বা নিজের কাজে লাগে এমন দেশি-বিদেশি লেখা পড়ুন। শরীর ভালো রাখতে যোগাসন বা শরীরচর্চা করুন। চলচ্চিত্র, নাটক, টিভি সিরিজ দেখতে পারেন। বাসায় ছোট সন্তান থাকলে তাকে দূর থেকে সময় দিন। বাকিদের সঙ্গেও দূরত্ব মেনে যোগাযোগ করুন। চিকিৎসক দীপঙ্কর কুমার বসাকের পরামর্শ-অন্তত ৬ ফুট দূর থেকে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন। আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেও সময় কাটাতে পারেন।
রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির সঙ্গনিরোধ
যিনি করোনা আক্রান্ত নন তবে আশঙ্কা আছে, এমন ব্যক্তিরও মেনে চলতে হবে সেলফ আইসোলেশন। করোনা আক্রান্ত কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করা, পাশাপাশি বসে কাজ করা বা অন্য কোনোভাবে তাঁর সংস্পর্শে এসে থাকলে এই সেলফ আইসোলেশন জরুরি। এসব ক্ষেত্রেও যতটা সম্ভব একা থাকতে হবে। সুস্থ হয়েও আইসোলেশনে থাকা বেশি কষ্টকর। তাই এমন ব্যক্তিদের জন্য সাময়িকী রিডার্স ডাইজেস্ট–এর এক নিবন্ধে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পছন্দের কাজগুলো করার। যদি তিনি রান্না করতে ভালোবাসেন, তাহলে হাইজিন মেনে রান্নাঘরেও ঢুকতে পারেন। তবে সেই সময়ে রান্নাঘরে একা থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। শরীর ঠিক রাখতে ঘরে বা বাসার ছাদে হাঁটতে পারেন, শরীরচর্চা করতে পারেন। সন্তানকে যদি পুরোটা সময় দূরে রাখতে না পারেন, তাহলে দূরত্ব মেনে তাঁর সঙ্গে গল্প করুন। বারান্দায় গাছপালা থাকলে সেগুলোর যত্ন নিতে পারেন। এর সঙ্গে নিজের যত্নে ত্রুটি রাখা যাবে না।নিজের কাটানো এই একান্ত সময়ে যাতে একঘেয়েমি না আসে, তার জন্য পরিবারের সাহায্য নিন। ঘরের মধ্যে একা থেকেও যেন নিজেকে একাকিত্বে ঘিরে না ফেলে, তেমন প্রস্তুতি রাখা ভালো। তাহলেই সঙ্গনিরোধের সময় ভালো কাটবে।